কেউ কথা রাখেনি, বাবাও ফিরে আসেনি...

কেউ কথা রাখেনি, বাবাও ফিরে আসেনি......


......মনিরুজ্জামান মানিক

কেউ কথা রাখেনি, বাবাও ফিরে আসেনি...
                                              লেখকের বাবা, মা ও বড় বোন

ওরা কথা দিয়েছিলো, বলেছিলো একদম চিন্তা করবেন না ভাবীসাব! সকালেই আমরা ওকে ছেড়ে দিবো। একই আবাসে ক্যান্টনমেন্টের সেনা ছাউনিতে আমাদের সাথে ওদের অনেকেরই বসবাস। পাকিস্তানি হলেও কারো কারো সাথে চোখ দেখাদেখি পরিচয়ও ছিলো। আচার আচরণে রহস্যজনক হলেও মা বিশ্বাস রেখেছিলো মনেপ্রাণে। 
তবুও অজানা আশংকায় বুক কেঁপেছিলো থরথর। অন্ধকার রাতের আঁধারে নিমিষেই স্বপ্ন ভেঙে চুরমার। বিভৎস রাত্রির কখন যে ভোর গড়িয়ে সকাল হলো টেরই পাওয়া গেলো না। আশায় বুক বেঁধে অপেক্ষার পালা। সকাল গড়িয়ে ভরদুপুরে খাঁ-খাঁ করছে। যুদ্ধ তবে কি লেগেই গেলো। 
বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে একই শপথে বলীয়ান পুরো জাতি। বুকের দুধ খাওয়া তিন মাসের সোনামনিটাও আজ মুখে দুধ নিচ্ছে না। পাঁচ পাঁচটি বাচ্চার বাবাহীন রোদনধ্বনিতে প্রকম্পিত হলো তিন রুমের সুবিশাল সরকারী কোয়াটার। 
পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নির্মমতার প্রতিচ্ছবিতে ভাসতে থাকলো হৃদয়ের আয়নায়। দিন গেল মাস গেল বছরও পেড়লো। অপেক্ষায় প্রহর গুণতে গুণতে মায়ের দিনাতিপাত। স্বাধীন দেশ লাল সবুজ রঙ্গে রঞ্জিত নিজের পতাকা, নিজেদের মানচিত্র বাঙালি জাতি সবই পেলো। শুধু আমার বাবা আর ফিরে এলো না। 
অপেক্ষার ৩৭ বছর মাও মনের বাঁধ ভেঙে পাড়ি দিলেন অজানা রাজ্যের অচিনপুরে। প্রতিবছর ডিসেম্বর এলেই যুদ্ধে যেতে ইচ্ছে করে। খুব ইচ্ছে করে। যে ময়দানে মিলন হবে আমার বাবা মায়ের। আমিও মুখ লুকাবো বাবা মায়ের হৃদ মাজারে হৃদয়ের মণিকোঠায়...
লেখক: পুলিশ কর্মকর্তা এবং শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রশিদ খানের সন্তান। 

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.