মাত্র ৭ লাখ টাকা খরচ করে নির্মাণ করুন মজবুত ও টেকসই বাড়ী


মাত্র ৭ লাখ টাকা খরচ করে নির্মাণ করুন মজবুত ও টেকসই বাড়ী
কোথা থেকে ইট আসবে, কোথা থেকে পাথর, কোন কোম্পানির রড ভালো, কোন সিমেন্টে অ্যাশ কম। নতুন বাড়ি তৈরির আগে এমন হাজারো প্রশ্নের সম্মুখীন হয় বাড়ির মালিকেরা। পাশাপাশি প্রকৌশলীদের ডিজাইনিং নিয়ে ঠিকাদারের কারচুপি, ১০ লাখ টাকার খরচ পৌঁছায় ১৪ লাখ টাকায়। এমন পরিস্থিতিতে বাড়ি অর্ধেক নির্মাণের পর কাজ বন্ধ রাখতে হয় মালিকপক্ষকে।
Image may contain: house and text

এমন ঝামেলা থেকে মুক্তি দিতে উন্নত বিশ্বের দেশগুলোর মতে বাংলাদেশে নতুন প্রযুক্তির বাড়ি নির্মাণ উপকরণ নিয়ে এসেছে অ্যাডভান্সড ডেভেলপমেন্ট টেকনোলজিস লিমিটেড। তাপ নিরোধক, পরিবেশবান্ধব, হাল্কা, দ্রুত স্থাপনযোগ্য এক্সপ্যান্ডেড পলিস্টিরিন স্যান্ডউইচ (ইপিএস) প্যানেল ব্যবহার করে বানানো যাবে ঘর। যার মাধ্যমে ৪ জন শ্রমিক ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা পরিশ্রমেই একতলা বাড়ি নির্মাণ করতে পারে। প্রকারভেদে খরচ পড়বে ৭ লাখ টাকা থেকে ১১ লাখ টাকা পর্যন্ত।
জানা যায়, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ব্যাপক জনপ্রিয় তাপ নিরোধক এই ইপিএস শিট দিয়ে ৬ থেকে ৭ ঘণ্টায় একটি বাড়ি নির্মাণ করা যাবে। এ ছাড়া এটি খুব সহ’জেই স্থানান্তরও করা যায়।
উচ্চ গুণগত মানসম্পন্ন এ ধরনের প্যানেল বিভিন্ন ধরনের শিল্পস্থাপনা, অবকাঠামো, ওয়ার্ক স্টেশন এনক্লোজার এবং শেড, ওষুধ কোম্পানি, পোশাক শিল্প ইন্ডাস্ট্রিজ, কোল্ড স্টোরেজ, শব্দনিরোধী মিলনায়তন, থিয়েটার হাউস, উপকূলীয় অঞ্চলে আশ্রয়কেন্দ্র, ভাসমান আবাসনসহ তাপ সহনীয় এবং শব্দহীন দেয়ালের জন্য পরিবেশগতভাবে আদর্শ ও উপযোগী।
অ্যাডভান্সড ডেভেলপমেন্ট টেকনোলজিস ঢাকার অদূরে মুন্সিগঞ্জে ৫৫ হাজার বর্গমিটার এলাকাজুড়ে কারখানা স্থাপন করেছে। এতে প্রতিবছর প্রায় ৬০ লাখ এসএফটি শিট ও ৫ লাখ বর্গফুট এক্সপ্যান্ডেড পলিস্টিরিন স্যান্ডউইচ (ইপিএস) প্যানেল তৈরি করে। ২০১৩ সাল থেকে কোম্পানিটি বিভিন্ন ধরনের শিল্পস্থাপনা ও অবকাঠামো উন্নয়ন কাজ করছে।
এর মধ্যে কোম্পানিটি প্রাণ বেভারেজ লিমিটেড, প্রাণ ডেইরি লিমিটেড, নাটোর এগ্রো লিমিটেড, প্রাণ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক লিমিটেড, নাসির গ্লাস ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, ইউনাইটেড গ্রুপ ডিইপিজেড অ্যান্ড সিইপিজেড, এনার্জি প্যাক লিমিটেড, ইং ওয়াং গ্যামেন্ট এক্সেসরিজ লিমিটেড, ঢাকা সাউথ পাওয়ার জেনারেশন (ডোরিন পাওয়ার), ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটি (প্রধান শাখা), এমবাসি অব দ্য ইউনাইটেড স্টেটস অব আমেরিকাসহ প্রায় ২০০টি কোম্পানি ও প্রতিষ্ঠানের কারখানা, গুদামঘর, অফিস তৈরি করেছে।
অ্যাডভান্সড ডেভেলপমেন্ট টেকনোলজিসের কর্মক’র্তা আশিকুল আলম জানান, এই পদ্ধতিতে বাড়ি তৈরি করলে ইটের চেয়ে অল্প খরচ হবে। ভবন তৈরির সময় প্যানেল টু প্যানেল হুকিং সিস্টেমে লাগানো হয়। ফলে এটি সহ’জে প্রতিস্থাপনযোগ্য। ইউরোপ থেকে আম’দানিকৃত কাঁচামালের মাধ্যমে ইপিএস প্যানেল তৈরি করা হয়।
ইপিএস প্যানেল টিনের বিকল্প হওয়া এতে জং ধ’রার কোনো শ’ঙ্কা নেই। কোম্পানিটি ইপিএস শিটের জন্য ৪০ বছরের গ্যারান্টি দিচ্ছে ও এর কালারের স্থায়ীত্বের জন্য ১৫ বছরের গ্যারান্টি দিচ্ছে। তিনি আরো বলেন, ইপিএস প্যানেল তাপ ও শব্দ নিরোধক হওয়ায় দিনের বেলায় ঘরের বাইরের তাপমাত্রার তুলনায় ভেতরের তাপ মাত্র ৭ থেকে ৮ ডিগ্রি কম হবে।
এ প্রসঙ্গে টেকনিক্যাল ডিরেক্টর এস এম রিফাত রেজা
হোসেন সেন্ট্রাল নিউজ24ডট’কমকে বলেন, টিনের পরিপূরক হিসাবে আম’রা দেশে এসএফটি ইপিএস প্যানেল নিয়ে এসেছি। এ উপকরণটি ব্যবহারের ফলে বাইরে থেকে ঘরে তাপ প্রবেশ করতে পারে না, একইভাবে ঘর থেকেও তা বের হতে পারে না।
যেহেতু ঘর তাপ প্রবেশ করতে পারে না। ফলে ঘর থাকবে এসির মতো ঠাণ্ডা। বাংলাদেশে এখন বছরের ৯ মাসেই গরম আবহাওয়া বিরাজ করছে। এমন পরিস্থিতিতে এ প্রযুক্তিটি দেশের প্রত্যেক শ্রেণীপেশার মানুষের উপকারে আসবে। তিনি বলেন, ২০১৩ সালের শেষ দিক থেকে আম’রা ইপিএস প্যানেলের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও কারখানা স্থাপনের কাজ শুরু করি। এরই মধ্যে আম’রা ব্যাপক সাড়া পেয়েছি। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে আম’রা আবাসিক ভবন তৈরির কাজ শুরু করব।
রিফাত রেজা বলেন, আমাদের প্রযুক্তি ব্যবহার করে বহুতল বিল্ডিং তৈরি সম্ভব। যেহেতু ইপিএস শিটের ওজন ৭৫০ গ্রাম (প্রতি বর্গফুট)। ফলে বাড়ি মালিক ইচ্ছে করলেই বাড়িটি খুলে নতুন জায়গায় পুনঃনির্মাণ করতে পারবে।
এদিকে কোম্পানিটির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা স’ম্পর্কে তিনি বলেন, ব’ন্যাকবলিত আমাদের এ দেশে ইপিএস প্যানেলের মাধ্যমে ভাসমান বাড়ি ও জমি তৈরি করা আমাদের লক্ষ্য। এতে করে কৃষক তার ঘর ও ফসলি জমি উভয় নিরাপদ রাখতে পারবে।
দেশের বাজারে প্রতি এসএফটি ইপিএস শিট পাওয়া যাবে ২০০ থেকে ২৫০ টাকায় । এই প্যানেল ব্যবহার করে একটি এক কক্ষের বাসা (ডাইনিং, কিচেনসহ) নির্মাণে ব্যয় হবে মাত্র দেড় লাখ টাকা। আর দুই বেডরুমের হলে দুই লাখ ৩০ হাজার থেকে আড়াই লাখ টাকা ব্যয় হবে।
গ্রামে বাড়ি নির্মাণে টিন-ইটের চেয়ে এই পদ্ধতিতে অল্প খরচ হবে। ইপিএসের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয় পেট্রোলিয়ামের বাই প্রোডাক্ট, যা দেখতে মলাসসের মতো। এই বাই প্রেডাক্টটিকে পলিমা’রাইজেশনের মাধ্যমে ছোট দানায় রূপান্তর করা হয়, যাকে রসায়নের ভাষায় স্ট্রাইরিন মনোমা’র বলা হয়। ছোট ছোট চিনির দানার মতো দেখতে এগুলো ইউরোপ ও উন্নত দেশ থেকে আম’দানি করা হয়। এই দানাগুলোকে উচ্চপ্রযুক্তি ব্যবহার করে একটি সলিড বডি বা ব্লক বানানো হয়, যার ৯৫ শতাংশই বাতাস এবং ৫ শতাংশ স্ট্রাইরিন মনোমা’র।
ওজন কম হওয়ায় এ ধরনের স্থাপনায় ভূমিকম্পের ক্ষতি অনেকাংশেই কম হবে। ভবনে লাগানোর সময় প্যানেল টু প্যানেল হুকিং সিস্টেমে লাগানো হয়। এটি যেহেতু হাল্কা তাই এর জন্য কলাম, ফুটিং, ছাদ, লোড বিয়ারিং কিছুই দরকার পড়ে না ।
প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী এস এম আনোয়ার হোসেন বলেন, `আমাদের প্লান্টে চাহিদা অনুযায়ী ভবিষ্যতে আরো উৎপাদন বাড়াব। আমাদের মতো স্বল্প আয়ের দেশে এটি খুবই উপযোগী নির্মাণ সামগ্রী হিসেবে মনে করি আমি।`
প্রকল্পে প্রতিনিয়ত বিনিয়োগ বাড়ছে জানিয়ে দেশের আবাসন শিল্পের এই শীর্ষ উদ্যোক্তা বলেন, ‘‘গ্রামের মানুষের জন্য অল্প খরচে বাড়ি বানানোর জন্য আম’রা দীর্ঘদিন ধরে পরিকল্পনা করে আসছি।আম’রা আশা করছি, আমাদের এই স্যান্ডউইচ প্যানেল গ্রামীণ অবকাঠামো নির্মাণ থেকে শুরু করে আধুনিক শিল্পায়ন-সর্বত্রই ব্যবহৃত হবে।নির্মাণ জগতে নতুন যুগের সূচনা করবে।’’

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.