পোশাক শ্রমিকদের লে-অফ ঘোষণা করলেই শিল্প মালিকদের প্রণোদনা বন্ধ । । দৈনিক জাতীয় খবর


পোশাক শ্রমিকদের লে-অফ ঘোষণা করলেই   শিল্প মালিকদের প্রণোদনা বন্ধ ।
Image may contain: one or more people and people sitting
দৈনিক জাতীয় খবর
যেসব তৈরি পোশাক শিল্প মালিক করোনাভাইরাস পরিস্থিতির অজুহাতে কারখানা বন্ধ বা লে-অফ ঘোষণা করবে তারা সরকার ঘোষিত প্রণোদনা পাবেন না। অর্থমন্ত্রণালয় থেকে সম্প্রতি এক চিঠিতে বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংককে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, এ প্রণোদনা শুধু অর্থ সচল কারখানাগুলো পাবে। বন্ধ ঘোষিত কোনো কারখানাকে প্রণোদনার অর্থ দেওয়া যাবে না। একই সঙ্গে ‘ডিমড রপ্তানিকারক’ বা থার্ড পার্টি রফতানিকারকরাও এসএমইখাতের প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে ঋণ পাবেন।
গত রোববার অর্থমন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরের কাছে এ চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে অর্থমন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। একই চিঠি শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়েও পাঠানো হয়েছে।

এ বিষয়ে অর্থ বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, তৈরি পোশাক শিল্প মালিকরা সরকারের কাছ থেকে বিভিন্ন সময়ে নানা সুবিধা নিয়ে থাকেন।
করোনাজনিত পরিস্থিতির কারণেও গার্মেন্টস মালিকদের জন্য সরকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। প্রণোদনা প্যাকেজের অংশ হিসেবে তৈরি পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের তিন মাসের বেতনও সরকার পক্ষ থেকে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু তারপরও অনেক শিল্প মালিক তাদের কারখানা লে-অফ ঘোষণা করেছে।
আমাদের কাছে খবর আছে, আগামীতে আরও কয়েকটি কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হতে পারে। এ ধরনের প্রচেষ্টা বন্ধ করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
অর্থ বিভাগের উপসচিব মোহাম্মদ আনিসুজ্জামান খান স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, নভেল করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) প্রাদুর্ভাবের কারণে সচল রফতানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের বেতন-ভাতা দিতে ঘোষিত আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় ঋণ সুবিধা দেওয়ার বিষয়ে অর্থ বিভাগের মতামত হচ্ছে- যে সব শিল্প প্রতিষ্ঠান ৮০ শতাংশের অধিক সরাসরি পণ্য রফতানি করে থাকে তাদের এলসি পরীক্ষা সাপেক্ষে কেবলমাত্র শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধের লক্ষে গঠিত ৫ হাজার কোটি টাকার তহবিল থেকে ঋণ দেওয়া যাবে। তবে কোনো শিল্প প্রতিষ্ঠান যদি লে-অফ ঘোষণা করে তাহলে ওইসব প্রতিষ্ঠান এ তহবিল থেকে ঋণ পাবে না। ৮০ শতাংশের কম বিবেচিত রপ্তানিকারকরা ২০ হাজার কোটি টাকার ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল থেকে ঋণ নিতে পারবে। যা দিয়ে শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করা যাবে।
নভেল করোনা ভাইরাসে অর্থনীতির ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায় ১ লাখ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন। এর মধ্যে রপ্তানিমুখী শিল্পের শ্রমিকদের বেতন দেওয়ার জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার তহবলি রয়েছে। এই তহবিল থেকে শিল্প মালিকরা ঋণ নিতে পারবেন। এ প্রণোদনা পাওয়ার পরও তৈরি পোশাক খাতের একের পর এক কারখানা লে-অফ ঘোষণা করছে। বিজিএমইএর তথ্য মতে, এরই মধ্যে দেশের ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ কারখানা লে-অফ করা হয়েছে। লে-অফের পথে রয়েছে আরও কারখানা। বিষয়গুলো নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিআরপিডি শাখা থেকে অর্থমন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের কাছে চিঠি দিয়ে প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণ সুবিধার বিষয়ে মতামত জানতে চাওয়া হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ওইদিনই জরুরিভিত্তিতে মতামত পাঠায় অর্থ বিভাগ।
ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) রক্ষার জন্য প্রধানমন্ত্রী ২০ হাজার কোটি টাকার একটি ঋণ সুবিধা ঘোষণা করেছেন। ওয়ার্কিং ক্যাপিটালের জন্য এ ঋণ সুবিধা ব্যবহার করতে পারবেন এসএমই খাতের উদ্যোক্তারা। ব্যাংক-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানকে তাদের নিজস্ব তহবিল থেকে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল বাবদ ঋণ দেবে। এ ঋণ সুবিধার সুদের হার হবে ৯ শতাংশ। প্রদত্ত ঋণের ৪ শতাংশ সুদ ঋণ গ্রহিতা শিল্প প্রতিষ্ঠান পরিশোধ করবে এবং অবশিষ্ট ৫ শতাংশ সরকার ভর্তুকি হিসেবে সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে দেবে। বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠানো মতামতে অর্থমন্ত্রণালয় বলেছে, ২০ হাজার কোটি টাকার এ প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে যেসব রপ্তানিকারকরা ভায়া হয়ে রপ্তানি করে (ডিমড এক্সপোটার্স) তারা ওয়ার্কিং ক্যাপিটালের ঋণ সুবিধা নিতে পারবেন। এ সুবিধা নিয়ে তারা শ্রমিক/কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করতে পারবেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিজিএমইএ'র ভাইস-প্রেসিডেন্ট এবং স্নেহা ডিজাইন (বিডি) লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম মান্নান (কচি) রাইজিংবিডিকে বলেন, বিষয়টি জটিলতার সৃষ্টি করবে। কারণ এটি একটি বিধান। বেশির ভাগ ফ্যাক্টরি কোনো কাজ করতে পারছে না। এই নিয়মের ফলে সবাই একটি গোলক ধাঁধায় পড়বে। বিষয়টি নিয়ে আমরা শ্রম মন্ত্রণালয়ের কাছে আবেদন করেছি। এছাড়া সরকারে উচ্চ পর্যায়ে কথা চলছে। এই মুহূর্তে বিষয়টি নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাই না।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.