চা বাগানেও সন্ধ্যা নামে - তৌফিক মিথুন (পর্ব ( পর্ব ১)

চা বাগানেও সন্ধ্যা নামে (পর্ব ১)

🌿


তৌফিক মিথুন

পূণ্যভূমি সিলেটে চা বাগান আছে অসংখ্য। 

ছোট ছোট চা বাগানগুলোর কথা না বাদই দিলাম। বড় থেকে মাঝারি সাইজের চা বাগান আছে আনুমানিক প্রায় ১৬০ টিরও বেশী।

এসব চা বাগানকে কেন্দ্র করে এত এত ঘটনা রয়েছে যে, বলে শেষ করা যাবে না। যারা ঐসব নির্জন চা বাগানে বসবাস করেন, তারা তো এসব ঘটনা জানেনই। যারা বিভিন্ন জেলা হতে চা বাগানে কিংবা আশেপাশে চাকুরীর সুবাদে যান, তারাও এসব ঘটনা নিয়মিত শুনে থাকেন। অনেকের আবার এসব নিয়ে ভিন্ন রকমের অভিজ্ঞতাও হয়।

আমার ছোট মামা একটা স্বনামধন্য চা বাগানের ম্যানেজার হওয়ার সুবাদে, কয়েক রাত চা বাগানে থাকার সুযোগ হয়েছিলো আমার। স্বাভাবিকভাবেই স্থানীয় কয়েকজনের সাথে খাতির হতে সময় লাগেনি।

ওদের কাছে শোনা কিছু ঘটনা পাঠকদের আজ জানাচ্ছি।

আমি যে চা বাগানে ছিলাম, সেটা ছিল সিলেটের মৌলভীবাজারের এক নির্জন প্রান্তে। ঐ বাগান থেকে আরেকটু ভেতরে গেলে অন্য একটি ছোট চা বাগান আছে। ঐ বাগানটির চারপাশ কাঁটা তাঁর দিয়ে খুব ভালোভাবে ঘিরে রাখা। দিনের বেলাতেও ঐ বাগানে কাজ করার জন্য মানুষ পাওয়া মুস্কিল। রাতের বেলাতো ভেতরে ঢোকাই নিষিদ্ধ। বাগানের গেইটেও এই কথা বড় বড় অক্ষরে লেখা আছে।

বিকেলে যখন বাংলো থেকে বের হচ্ছি, মামাও কথাটা দুইবার মনে করিয়ে দিলেন। আর যেখানেই যাই, ঐ ছোট্ট চা বাগানের কাছে যেন না যাই।

ঐ চা বাগানে প্রায়ই রাতের আঁধারে একটা মেয়েকে চা পাতা তুলতে দেখা যায়। মেয়েটা অল্প বয়সী, খুবই সুন্দরী এবং চেহারাটাও মায়াবী। ঐ চা বাগানের আশেপাশে যারা থাকে, তারা প্রায় সবাই মেয়েটাকে দেখেছে। কিন্তু মেয়েটার কাছে যাওয়ার সাহস হয়নি কারোই।

চৌকিদার শব্দটার সাথে আমাদের মুটামুটি সবারই পরিচয় আছে। যারা জানেন না তাদের বলি, চা বাগানে যারা পাহারা দেয়, ঐ অঞ্চলে তাদেরকে চৌকিদার বলে। প্রায় প্রতিটা বাগানেরই আলাদা আলাদা চৌকিদার আছে। যাদের কাজ বাগান পাহারা দেয়া।

যে চা বাগানের কথা বলছি, সেই চা বাগানের বৃদ্ধ চৌকিদারের মৃত্যুর পরে, এক নতুন চৌকিদার নিয়োগ করা হয়েছিলো। চৌকিদারের বয়স কম। পঁচিশ থেকে ত্রিশের মধ্যে। রাতে ঐ বাগান পাহারা দিতে হবে এটাই তাঁর দায়িত্ব। তবে আগে থেকেই তাকে বলে দেয়া হয়েছিলো, কোনভাবেই যেন বাগানের ভেতরে রাতে না ঢোকে। কোন ভাবেই না।

চৌকিদারের জন্য বাগানের বাইরে একটা টং ঘর মতো বানানো ছিলো। ঝড়-বৃষ্টি এলে ঐ খানে আশ্রয় নিতো চৌকিদাররা। তাছাড়া মাঝে মাঝে বন্য জন্তু জানোয়ারের হামলা থেকে রক্ষা পেতেও এই টং ঘর ছিল বেশ কার্যকরী। 

ঐ রাতে বাগানের আশেপাশে কয়েকটা চক্কর দিয়ে ক্লান্ত হয়ে টং ঘরে বসেছিলো চৌকিদার। সবে হাতের বিড়িটা শেষ হয়েছে, এমন সময় বাগানের ভেতরে কারো হেঁটে চলার শব্দ পেল সে।

গভীর রাতে চা বাগানে যারা রাত কাটিয়েছেন, শুধু তারাই জানেন কি অসহ্য রকমের নীরবতা থাকে ঐ সব এলাকায়। সামান্য পায়ে হাঁটার শব্দও শুনতে পাওয়া যায় অনেক দূর পর্যন্ত। খুব সাহসী মানুষ না হলে, চা বাগানে রাতের বেলা একা পাহারা দিতে চিন্তাও করবে না কেউ। 

শব্দ শুনে সাথে সাথেই টং ঘর থেকে বেড়িয়ে এলো চৌকিদার।

বাগানটা তেমন বড় না। এদিক ওদিক টর্চের আলো ফেলতেই সে দেখলো, একটা মেয়ে রাতের অন্ধকারে চা পাতা তুলছে। চৌকিদার ভাবলো আশেপাশের কোন মেয়ে মনে হয় চুরি করার মতলবে, রাতের অন্ধকারে চা পাতা তুলছে।

কয়েকবার চিৎকার করে ডাকাডাকি করার পরেও মেয়েটার কোন ভ্রূক্ষেপ নেই। 

শেষে বিরক্ত হয়ে সে এগিয়ে গেলো মেয়েটার কাছে। ভুলে গেল তাকে দেওয়া নির্দেশ। গেইটের তালা খুলে ঢুকে গেল সেই বাগানে।

(চলবে)

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.