৫ কারণে নির্বাচনী লড়াইয়ে ইশরাকের চেয়ে এগিয়ে তাপস

ঢাকা: ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন উত্তরে আতিকুল ইসলাম ও দক্ষিণে শেখ ফজলে নূর তাপস। অন্যদিকে, মেয়র পদে উত্তরে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য তাবিথ আউয়াল এবং দক্ষিণে পেয়েছেন দলের সদ্য প্রয়াত ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন।
আগামী ৩০ জানুয়ারি ঢাকা দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ইতিমধ্যে এই নির্বাচনে কারা কারা প্রার্থী হচ্ছেন তা চূড়ান্ত হয়ে গেছে। বিশেষ করে প্রধান দুই দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীতা চূড়ান্ত হওয়ার পর নির্বাচনী আমেজ পুরো ঢাকা সিটি কর্পোরেশন জুড়ে। এই নির্বাচনে ঢাকা দক্ষিণের দিকেই মানুষের আগ্রহ অত্যন্ত বেশি। কারণ ঢাকা দক্ষিণের বর্তমান মেয়র সাঈদ খোকনকে মনোনয়ন না দিয়ে ঢাকা ১০ আসনের নির্বাচিত এমপি শেখ ফজলে নূর তাপসকে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দিয়েছে। 
তার ফলে ঢাকা দক্ষিণের নির্বাচনের যে মেরুকরণ এবং নির্বাচনের সমীকরণ তা পাল্টে গেছে। বিএনপি মনে করেছিল সাদেক হোসেন খোকার প্রতি জনগণের যে আবেগ, ভোটারদের যে ভালোবাসা সেটাকে কাজে লাগিয়ে তারা নির্বাচনী বৈতরণী পাড় হবে। আর এ জন্যই আনকোড়া অনভিজ্ঞ তরুণ যিনি কোনো নির্বাচনেই কখনো অংশগ্রহণ করেননি সেই ইশরাক হোসনকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল। 
এই মনোনয়ন নিয়ে বিএনপির মধ্যেও মতবিরোধ ছিল। ইশরাক হোসন জনগণের আবেগকে কাজে লাগিয়ে যেন ভোট যুদ্ধ পাড় হতে পারেন সেই বিবেচনা থেকেই বিএনপি তাকে মনোনয়ন দিতে দ্বিতীয় চিন্তা করেনি। আর আওয়ামী লীগ এই বিষয়টি বিবেচনায় রেখে একদিন পর বর্তমান মেয়র সাঈদ খোকনকে বাদ দিয়ে শেখ ফজলে নূর তাপসকে মেয়র হিসেবে মনোনয়ন দিলো। এর মাধ্যমে শুরু থেকেই ইশরাকের আবেগে জল ঢেলে দিলেন তাপস।
ধারণা করা হচ্ছে, অনেকগুলো কারণে ইশরাক হোসেনের চেয়ে তাপস ভোটের যুদ্ধে শুরুতে এগিয়ে থাকবেন। যদিও ভোটের হিসেব নিকেশ এখনো অনেক বাকি রয়েছে। কেবলমাত্র মনোনয়ন চূড়ান্ত করা হয়েছে। নির্বাচনী প্রচারণায় অনেক কিছুই ঘটতে পারে। কিন্তু প্রধাণ দুই দলের মনোনয়ন চূড়ান্ত করার পর দেখা যাচ্ছে যে ভোটের মাঠে ইশরাকের চেয়ে তাপস এগিয়ে। 
আর এর প্রধান কারণগুলো অনুসন্ধান করতে গিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা যেগুলো পেয়েছে তার মধ্যে রয়েছে:
তাপসের ব্যক্তিগত ইমেজ: তাপস ব্যক্তিগত ভাবে একজন ক্লিন ইমেজের রাজনীতিবিদ। গত তিন মেয়াদে এমপি হওয়ার পরও তার কোনো বদনাম হয়নি। আর সত্যিকার অর্থে তিনি পরিশুদ্ধ রাজনীতির সন্তান। তিনি জনকল্যাণে কাজ করতে চান এই বিশ্বাস মানুষের মধ্যে আছে।
অন্যদিকে বিএনপি প্রার্থী ইশরাক হোসেন একেবারেই নতুন আনকোড়া। পিতার আবেগই তার একমাত্র ভরসা। কিন্তু তার ইমেজ কেমন বা তিনি সিটি কর্পোরেশনের মতো একটা বিশাল প্রতিষ্ঠান কিভাবে চালাতে পারবেন সে বিষয় কোনো ধারণা তার মধ্যে নেই। তার অনভিজ্ঞতা তার ক্ষেত্রে একটি নেতিবাচক দিক বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছে।
বিগত মেয়রের সমালোচনা: তাপস আওয়ামী লীগের প্রার্থী হলেও বিগত মেয়রের সমালোচনা করতে পারবেন। আর বিএনপি যেসব বিষয়কে সামনে নিয়ে আসবে যেমন ডেঙ্গুর উপদ্রব বা সিটি কর্পোরেশনে জলজটের মতো বিষয়, সেসব নিয়ে কথা বলবেন তাপসও। তিনি এই বিষয়গুলোকে নিয়ে নিশ্চিত ভাবেই অন্যরকম ভাবনা উপস্থাপন করবেন। ফলে ভোটের মাঠে বিগত মেয়রের সমালোচনা করে জনগণকে আকৃষ্ট করার জন্য যে কৌশল অবলম্বন করবেন সেই কৌশল ধোপে টিকবে না। ফলে শুরুতেই সেই কৌশল বাধাগ্রস্ত হবে।
সাদেক হোসেন খোকা: সাদেক হোসেন খোকা অখণ্ড ঢাকার শেষ মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। যদিও তার মৃত্যুর পর মানুষের যে শোক ছিল তা অভাবনীয়। কিন্তু সাদেক হোসেন খোকা মেয়র হিসেবে দূর্নীতি, দুর্বৃত্তায়ন, কোঠারী স্বার্থকে সংরক্ষণ করেছিলেন। আর দীর্ঘ দিন তিনি মেয়র থাকার পরও ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের দৃশ্যমান তেমন কোনো উন্নয়ন করতে পারেননি। ফলে শুরুতেই ইশরাক তার বাবার কারণে ব্যকফুটে চলে যাবে।
তাপসের পক্ষে একাট্টা আওয়ামী লীগ: নির্বাচনে তাপসের প্রার্থীতা ছিল আওয়ামী লীগের তৃণমূলের প্রাণের দাবি। দক্ষিণের আওয়ামী লীগের নেতারা একাট্টা হয়েই তাপসকে প্রার্থী করতে চেয়েছিলেন। আর সেকারণেই আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ ভাবে এই নির্বাচনে তাপসের পিছনে দাঁড়াবে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছে। আর ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগ সব সময়ই অত্যন্ত শক্তিশালী। এ সময় তাদের পরাজিত করতে পারা খুব কঠিন একটা কাজ।৫ কারণে নির্বাচনী লড়াইয়ে ইশরাকের চেয়ে এগিয়ে তাপস
তাপসের পক্ষে কাজ করবেন নির্বাচিত এমপিরা: নির্বাচনের মাঠে তাপসের পক্ষে কাজ করবেন ঢাকা দক্ষিণের নির্বাচিত এমপিরা। নির্বাচিত এমপিরা যদি এক হয়ে তাপসের সঙ্গে কাজ করেন তাহলে ভোটের মাঠে তা ইতিবাচক ফলাফল আনবে।
অন্যদিকে ইশরাক হোসেনকে মনোনয়ন দেওয়ার ফলে বিএনপি বিভক্ত হয়ে পড়েছে। কারণ ঢাকা দক্ষিণে একটি বড় ফ্যাক্টর হচ্ছে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। আর এই নির্বাচনে তিনি ইশরাক হোসেনকে মনোনয়ন দেওয়ার বিষয়টি ইতিবাচক হিসেবে নেননি। ফলে এই নির্বাচনের দৌঁড়ে বিএনপি শুরু থেকেই বিভক্ত হবে। বিভক্ত বিএনপির সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগের লড়াইয়ে আওয়ামী লীগ যে এগিয়ে থাকবে তা বলার অপেক্ষা থাকে না।

তাই সার্বিকভাবে ৩০ জানুয়ারী ভোটের নির্বাচনে ফলাফল কি হবে তা অনেক দূরের ব্যাপার। কিন্তু নির্বাচনের মনোনয়ন চূড়ান্ত করার মূহুর্তে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনের মাঠে তাপস যে তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর চেয়ে এগিয়ে থাকবেন তা নিশ্চিত করেই বলা যায়। অন্তত তিনি ইশরাক হোসেনের প্রতি জনগণের যে আবেগ, সেই আবেগে জল ঢেলে দিয়েছেন তা বোঝার জন্য কোনো রাজনৈতিক বিশ্লেষক হওয়ার প্রয়োজন নেই।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.