চুকনগর : মূর্তিমান একাত্তরে বিভীষিকার অপর নাম


রুবায়েত হৃদয় খুলনা সিটি প্রতিনিধিঃ মোমবাতি ধরি প্রজ্জ্বলনে আলো, আধার মিলায়ে যায়.. আর কত রক্ত ঝরিয়ে এ স্বাধীনতা পাওয়া যায়,

১৯৭১ সালের ২০ মে খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার চুকনগর গ্রামে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এদেশীয় দোসরদের সহযোগিতায় ১০ হাজার নিরীহ মানুষকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। এটি একদিনে করা সবচেয়ে বড় গণহত্যা পৃথিবীর ইতিহাসে। পৃথিবীর ইতিহাসে একদিনে এত মানুষের হত্যা বোধহয় আর কোথাও ঘটেনি।
স্বাধীনতার ৩৫ বছর পর সেখানে নির্মিত হয়েছিল চুকনগরের স্মৃতি স্তম্ভটি কিন্তু দীর্ঘ ৫০বছর পার হলেও বধ্যভূমিটিতে পূর্ণাঙ্গ একটি কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হয়নি এখনো। সকল শহীদের নামের তালিকাটিও স্পষ্টভাবে নেই, স্বীকৃতিও দেয়া হয়নি শহীদদের সন্তানদের। পরিবারগুলো চরম দারিদ্র্যে কোনোমতে বেঁচে আছে।
১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধ চলার সময় ৫ মে দক্ষিণাঞ্চলে বাংলাদেশের সর্ব প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে রাজাকার বাহিনী গঠন করা হয়। এই রাজাকার বাহিনীর নেতৃত্ব দেন অন্য অনেকের সাথে সে সময়ের জামায়াত নেতা এ কে এম ইউসুফ। রাজাকার বাহিনীর সহযোগিতায় এবং প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণে খুলনা এবং বাগেরহাট অঞ্চলে শুরু হয়েছিল মুক্তিযোদ্ধা এবং বিশেষত ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন।

নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা পেতে, জীবন বাঁচাতে ভারত যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাগেরহাটের মংলা, রামপাল এবং খুলনার বটিয়াঘাটা, দাকোপ, ফুলতলাসহ বিভিন্ন উপজেলা থেকে হাজার হাজার মানুষ আশ্রয় নেয় ডুমুরিয়া উপজেলার চুকনগর এলাকায়। ভারত যাওয়ার জন্য ঐ অঞ্চলকে তখন তারা নিরাপদ রুট হিসেবে ভেবেছিল। তারা ভেবেছিল কেশবপুর দিয়ে সীমান্ত পার হয়ে ভারতের দিকে রওনা হবেন, তার আগের তারা দলবদ্ধভাবে জড়ো হয়েছিল স্থানটিতে। কাঁচা রাস্তা, খাল বেষ্টিত চারিদিকে অনেক নদনদী থাকায় এদিকে পাকিস্তানী বাহিনী আসবে না বলে ধারণা করা হয়েছিল।

কিন্তু দোসরদের সহযোগিতায় খবর পেয়ে সাতক্ষীরা থেকে দুপুর নাগাদ পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ট্রাক ও জিপ নিয়ে চুকনগরে প্রবেশ করে। তৎকালীন প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য থেকে জানা যায় পাতখোলা বিল থেকে তারা গুলি চালাতে আরম্ভ করে পরে চুকনগর বাজারের দিকে আসে। একনাগাড়ে বিকেল ৩টা পর্যন্ত গুলি চালিয়ে তারা অসংখ্য মানুষকে হত্যা করে। অন্তত ১০ হাজার মানুষকে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী গুলি করে হত্যা করে, তাদের রক্তে লাল হয়ে ওঠে ভদ্রা নদীর পানি।

এতবড় গণহত্যা তবু সে শোঁকগাথা আজো রচিত হয়নি বিশদভাবে, এমনকি স্বাধীনতার দলিলেও চুকনগর গণহত্যা সঠিকভাবে বিস্তারিত উঠে আসেনি। অবহেলায় অবহেলিতভাবে পড়ে রয়েছে বাংলাদেশের অনেক বদ্ধভূমি, বিলীন করা বিধবা পল্লী আজও আর্তনাদের শিকার। সরকারকে আরো দৃঢ় ভাবে এগিয়ে আসতে হবে, তৈরি করতে হবে বিভিন্ন স্মৃতিসৌধ,কমপ্লেক্স এবং জাদুঘর।

হাজার মানুষের রক্ত ভিড়ে জেগে রয়েছে এ বদ্বীপ, রক্ত মাংস অস্থিমজ্জার ঢিপি এর উপর দাঁড়িয়ে রয়েছে পঞ্চাশ বছরের বয়সী এ বাংলাদেশ। আর শহীদের স্মৃতি অম্লান রাখতে কর্মগুলো হোক আরও সুদুরপ্রসারী, যাতে পরবর্তী প্রজন্ম বয়ে নিয়ে যেতে পারে সেই মুক্তিকামী মানুষের চিন্তাধারা

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.